সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

ঢাবি ছাত্রদলের সবাই চান নতুন কমিটি, বিভক্তিতে বিশৃঙ্খলা

ঢাবি ছাত্রদলের সবাই চান নতুন কমিটি, বিভক্তিতে বিশৃঙ্খলা

স্বদেশ ডেস্ক:

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। সারা দেশের আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বর্তমান অবস্থা ভালো না। সরকারি দলের নির্যাতন ও নিজেদের মধ্যে বিভক্তি তাদেরকে শোচনীয় অবস্থায় নিয়ে গেছে।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের ঢাবি শাখায় তৈরি হয়েছিল পাঁচটি গ্রুপ। যার সংখ্যা এখন বেড়ে সাতটিতে পৌঁছেছে। এই সাতটি গ্রুপ ছাড়াও ছোট ছোট অনেক সাব গ্রুপও তৈরি হয়েছে। এসব গ্রুপের নেতৃত্বে যারা আছেন তারা অধিকাংশই আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অনুসারী।
২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিন মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়ার পর কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার। কিন্তু তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন কমিটিতে থাকা একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক। তাদের মতে, ওই কমিটিরই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে একুশ মাস আগে। আহ্বায়ক কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সভাপতি খোকন গ্রুপের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাবে আহ্বায়ক হিসেবে রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সদস্যসচিব আমান উল্লাহ আমানসহ আরো ৪৭টি পদ দেয়া হয়। যার ফলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে। পরে আমান উল্লাহ আমান কেন্দ্রীয় সভাপতি খোকন গ্রুপ থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেও মূলত সভাপতি গ্রুপের প্রভাবেই তিনি এ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের।
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব কমিটি নিয়েও আছে অভিযোগ। অধিকাংশ হল কমিটিতে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটিতেও আছেন এবং শুধু অতিরিক্ত গ্রুপিংয়ের কারণেই এখন পর্যন্ত সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কমিটি ঘোষণা দিতে পারেনি বলেও জানান একাধিক নেতাকর্মী।

সংগঠনকে সুসংহত ও শক্তিশালী করতে তাই নেতাকর্মীদের চাওয়া অবিলম্বে একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি পদপ্রার্থী ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মাহমুদুল হাসান রনি বলেন, আমাদের এখন সব থেকে বেশি যেটা দরকার তা হলো একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি। আমাদের সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাচ্ছে কমিটি না থাকায়। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির কথা কেউ শোনে কেউ শোনে না। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। যারা নিয়মিত রাজনীতির মাঠে তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে অর্থাৎ পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতাদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিই সবার প্রত্যাশা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার সময় আরেক সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাফী ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিটি সবারই প্রত্যাশা। সামনে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের ডাক আসবে কিন্তু আমরা এখন অনেকটা বিভক্ত হয়ে আছি বলা চলে। ছাত্ররাজনীতির মূল যে জায়গাটা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) সেখানে যদি আমরা বিভক্তির কারণে আন্দোলন কঠোর অবস্থানে নিতে না পারি তাহলে সারা বাংলাদেশের আন্দোলন নিয়ে সত্যিই দুশ্চিন্তা করতে হয়। তাই অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যোগ্যদের চিহ্নিত করে কমিটি দেয়া হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

দলের সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে ছোট ছোট দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীরাও চান অবিলম্বে একটা কমিটি দিয়ে সংগঠনকে যেন গতিশীল করা হয়। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত সাহিত্য সম্পাদক প্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য শাহীনুর ইসলাম শাহীন বলেন, আমরা আমাদের প্রাণের সংগঠনের এমন অচলাবস্থা দেখতে চাই না। আমরা চাই বিপদে-আপদে, ভালো খারাপ উভয় সময়ই সংগঠন তার আপন গতিতে চলতে থাকুক। এর জন্য যদি এই মুহূর্তে কমিটি দেয়া লাগে তাহলে তাই দেয়া হোক।

সামনের দলীয় আন্দোলনে কমিটি প্রভাব ফেলবে কি না এই নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। আহ্বায়ক কমিটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে তথা জাতীয় আন্দোলনে গ্রুপিং কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে কমিটি দ্রুত দিলে তখন যেটুকু প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে সেটুকুও আর থাকবে না।

কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন। তিনি বলেন, সরকারি দলের অত্যাচার নির্যাতন, পরিবারের চাপে ও পদ না পেয়ে হতাশায় অনেকেই সংগঠন বাদ দিয়েছে। সংগঠনের এখন দুরবস্থা চলছে।
কমিটির ও আন্দোলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সদস্যসচিব আমানুল্লাহ আমান নয়া দিগন্তকে বলেন, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। দলীয় যেকোনো কর্মসূচি সামনের সারিতে থেকে আমরা পালন করার চেষ্টা করব। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ঠিক, কিন্তু এর সাথে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ছাত্র সংগঠনের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তার জন্য কি তাদের কাজকর্ম চলছে না?

কমিটির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবি অবশ্যই যৌক্তিক। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। কিন্তু করোনা সঙ্কট ও অন্যান্য সাংগঠনিক ব্যস্ততার কারণে ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ার প্রধান কারণ বলে মনে করি। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান অচিরেই কেন্দ্রীয় সংসদ ও ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি শাখায় বিভিন্ন গ্রুপের সভাপতি পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের অনুসারী এস এম মাহমুদুল হাসান রনি, ওয়ালিউর রহমান জনি ও ডাকসু নির্বাচনে ভিপিপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের অনুসারী শাজাহান শাওন ও শরীফ প্রধান। কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিনের অনুসারী শাফী ইসলাম ও ফারুক আহমেদ। কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি শ্রাবণের অনুসারী জহিরুদ্দিন, এজাজুল করীম রুয়েল ও সোহেল রানা। সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল মেহেদী তালুকদারের অনুসারী আকতার হোসেন ও হাসানুর রহমান। বরিশালের আঞ্চলিক গ্রুপ থেকে এইচ এম আবু জাফর এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান নিজেই একটি গ্রুপ থেকে সভাপতি প্রার্থী।
উল্লেখ্য, সদস্যসচিব আমান উল্লাহ আমান ছাড়া সভাপতি পদ প্রত্যাশী বাকি সবাই বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877